সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ

 



কোটালীপাড়ায় আর্থিক অনিয়মে প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সভাপতির গড়িমসি

 কোটালীপাড়া(গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি : -শেখ কামরুজ্জামান (রানা)।


আর্থিক অনিয়মের কারনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর(মাউশি)থেকে পত্র দেওয়ার পরও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গড়িমসি করায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

গত ২০ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম মোসলেম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে পিঞ্জুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুজয় সাহাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এস এম মোসলেম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এই পত্রে বলা হয়, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলাধীন পিঞ্জুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরী এর বিরুদ্ধে PBGSI স্কিমের অর্থ বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের টাকা ৭ মাসের অধিক হাতে রাখায় আর্থিক অনিয়মের কারনে উক্ত প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সভাপতিকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

মাউশি কতৃক পত্র পাওয়ার দেড়মাস পার হলেও প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীর আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুজয় সাহা। এতে বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতিসহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

কোটালীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসুত্রে জানা যায়, পিঞ্জুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ করেন বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান তালুকদার চঞ্চল। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। পরবর্তীতে কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একই ঘটনায় সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসারকে পৃথক তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় উপজেলা প্রশাসন। এসব তদন্ত প্রতিবেদনে তার নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয় উঠে আসে। 

তদন্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ইতিপূর্বে প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। পরবর্তীতে এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর উপানুচ্ছেদ ১৮.১(খ) অনুযায়ী পিঞ্জুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরী এর বকেয়া না দেয়ার শর্তে ০৩ (তিন) মাসের এমপিও বেতন ভাতাদি বন্ধ রাখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। 


পিঞ্জুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান তালুকদার চঞ্চল বলেন, প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরী বিদ্যালয়টির পুরাতন একটি পাকা টিনশেড ঘর, দুটি টিনশেড ঘর, একটি টিনশেড মসজিদ ও কয়েকটি গাছ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্নভাবে নানা অনিময় ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যালয়ের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তা প্রমাণ পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এদিকে আর্থিক অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ায় প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি সুজয় সাহাকে চিঠি দিলেও তিনি অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বরং দুর্ণীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। 


কামরুজ্জামান তালুকদার চঞ্চল আরও বলেন, নিহার রঞ্জন বারুরী একজন অযোগ্য প্রধান শিক্ষক। তিনি একটি প্রকাশনী থেকে কমিশন পেয়ে বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে গাইড বই তুলে দেন। এই প্রকাশনীর দেওয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। অনেক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। আবার সেই ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা দিন দিন মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে। তাছাড়া তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের বহির্গমন ছুটি দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত। এই অযোগ্য দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি করছি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, নিহার রঞ্জন বারুরী একজন অযোগ্য প্রধান শিক্ষক। তিনি এর আগে ধারাবাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। আমার মনে হয় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোন ক্লাসের কোন বিষয়ে তাকে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে দিলে তিনি পড়াতে পারবেন না। এই অযোগ্য প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে কীভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা এলাকাবাসী এই অযোগ্য প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চাই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিঞ্জুরী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুজয় সাহা বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে চিঠি পেয়েছি। বর্তমানে বিদ্যালয় সরকারি ছুটিতে বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয় চালু হলে প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন বারুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র দিয়ে জানানো হবে।


# শেখ কামরুজ্জামান( রানা)

 ০১৭১৮০৬৬০১৮ 

৫/১০/২৫ ইং

Post a Comment

أحدث أقدم