সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ

 



চারঘাটে মতলেব ও জীবনের নেতৃত্বে সন্ত্রাস-কিশোর গ্যাংয়ের রাজত্ব,প্রশাসনের অভিযানে উন্মোচিত অপরাধ জগত


২৫-০৫-২০২৫


পাভেল ইসলাম মিমুল স্টাফ রিপোর্টার 


রাজশাহীর চারঘাটে দিন দিন বেড়ে চলেছে বিএনপি নেতা জহুরুল হক জীবন ও মতলেবুর রহমান মতলেবের 

নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। 


স্থানীয়দের অভিযোগ,চারঘাট উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জীবন এবং ছাত্রদলের সাবেক নেতা মতলেব—দুজনই একাধিক অস্ত্র, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদকের মামলার আসামি এবং তারা ইতিমধ্যে কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে কারাভোগও করেছেন।


উপজেলার স্বাদীপুর গ্রামের মখলেছুর রহমানের ছেলে মতলেব উদ্দিন একাধিক নাশকতা ও মাদক মামলার আসামি হিসেবে পরিচিত। তার নেতৃত্বে চারঘাট ও আশপাশের এলাকার অপরাধপ্রবণ ও নেশাগ্রস্ত যুবকদের একত্র করে গড়ে তোলা হয়েছে একটি ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক।


সম্প্রতি বিএনপি নেতা আদিলের বাড়ির প্রাচীরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল মতলেব ও জীবনের অনুসারীরা। 


অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ‘সান্ত’—মতলেবের মোটরসাইকেল চালক,এবং অপরজন ‘রেন্টু’—মেহেরচন্ডি এলাকার কুখ্যাত একাধিক মামলার আসামি। তারা অস্ত্র, ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িত। বিস্ফোরণের মতো একটি গুরুতর ঘটনায় জড়িতদের নাম প্রকাশ্যে আসলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি,যা জনমনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।


চারঘাটের বালুঘাট এলাকায় অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলোতে মাটি কেটে বিক্রির মাধ্যমে চলছে কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য। এই অর্থই মূলত মতলেব বাহিনীর সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং চক্র পরিচালনার মূল চালিকাশক্তি। দিনের পর দিন প্রশাসনের চোখের সামনে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও জড়িতদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।


তবে সোমবার, ২৮ এপ্রিল বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সোয়া ছয়টা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর যৌথ অভিযানে পদ্মা নদীর পাড়ে দখলকৃত সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। 


এ সময় মাদক সেবনের অভিযোগে চারঘাট পৌর এলাকার মিয়াপুর মহল্লার মো. সোহেল রানা (৪৮) ও কাটাখালি পৌর এলাকার কাপাসিয়া মহল্লার মো. মিজু (২৮) নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।


এর আগে ১১এপ্রিল অভিযানের পূর্বমুহূর্তে মতলেব বাহিনীর নেতৃত্বে ২০-২৫ জন দেশীয় অস্ত্র হাতে প্রশাসনের সদস্যদের উপর বাধা প্রদানের চেষ্টা চালায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় ইউএনও জান্নাতুল ফেরদৌস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন এবং চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত করেন।


অভিযানের পরে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের উপর হেনস্থার ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে কিছু সংবাদ প্রকাশিত হলেও হুমকি ও প্রতিহিংসার আশঙ্কায় অধিকাংশ গণমাধ্যমই মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।


এদিকে, স্বাদীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মতলেব বাহিনীর নিয়মিত আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পর বিদ্যালয়ের চত্বরেই চলে মাদক সেবন, জুয়া ও নারীসহ অশ্লীল কার্যকলাপ। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ত্যাগী নেতা বলেন, “মতলেব ও জীবনের কর্মকাণ্ডে আমরা আতঙ্কিত। তারা বিএনপির ভাবমূর্তিকেও ধ্বংস করছে।”স্থানীয় এক গন্যমান্য ব্যক্তি বলেন, “প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে চারঘাট পুরোপুরি সন্ত্রাসীদের দখলে চলে যাবে।”


তিনি আরও বলেন, “বিএনপি নেতা আদিলের বাড়ির পাশে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্তরা মতলেবের অনুসারী প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন রহস্যজনকভাবে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমরা আইনের শাসন নিয়ে শঙ্কিত।


(চলবে...)

পরবর্তী পর্বে মতলেব ও জীবনের গোপন রাজনৈতিক ও অপরাধ জগতের অজানা তথ্য প্রকাশ করা হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন