চুয়াডাঙ্গায় অনলাইন জুয়ার মাস্টার এজেন্টসহ গ্রেফতার ২, সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা।
মোঃ মিনারুল ইসলাম
চুুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি
আজ ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে দামুড়হুদা মডেল থানার জয়রামপুর দাসপাড়ায় অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।
অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ। এর অংশ হিসেবে, অনলাইন জুয়ার সাইট 1xBet-এর মাস্টার এজেন্ট শুভংকর কুমার দাস (২৩) ও তার সহযোগী হাফিজুল ইসলাম ওরফে হ্যাপিকে (২৫) গ্রেফতার করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল (CCIC)।
এই সময়ে তাদের কাছ থেকে অনলাইন জুয়া পরিচালনায় ব্যবহৃত একাধিক স্মার্টফোন ও সিম উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতার ও জব্দকৃত সামগ্রী
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোনগুলো পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেগুলোতে 1xBet, Reddy, MelBet, MobCash, Teligram, Binance, bKash, SellFin, Nagad, Rocket-এর মতো জুয়া ও আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন লগইন করা ছিল।
এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করে তারা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছিল।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গার সম্মানিত পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, বিপিএম-সেবা-এর নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক সামসুদ্দোহা, যার সঙ্গে ছিলেন উপ-পুলিশ পরিদর্শক সৌমিত্র সাহা, মুহিদ হাসান, সহকারি উপ-পুলিশ পরিদর্শক রজিবুল, রমেন, আরিফ ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা।
জুয়া চক্রের কার্যপ্রণালী
গ্রেফতারকৃত শুভংকর কুমার দাস 1xBet-এর একজন মাস্টার এজেন্ট হিসেবে কাজ করত। সে দামুড়হুদা এবং আশেপাশের এলাকার উঠতি বয়সী যুবকদের টার্গেট করত।
তাদের ফোনে জুয়ার বিভিন্ন অ্যাপস ইনস্টল করে দিয়ে জুয়ার সাইটে রেজিস্ট্রেশন করে দিত। এভাবে সে যুবকদের অনলাইন জুয়ার প্রতি আকৃষ্ট করে জুয়া পরিচালনায় উৎসাহিত করত।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে যে, এই ধরনের অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে যুবসমাজ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এবং ঋণ শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো চরম পথ বেছে নিচ্ছে।
পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা জানান, 1xBet, MelBet-এর মতো বেশিরভাগ বেটিং সাইট রাশিয়া থেকে পরিচালিত হয়। এই জুয়াড়ি চক্রগুলো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ব্যবহার করে নির্দিষ্ট নম্বরে টাকা গ্রহণ করে।
এভাবে দেশের টাকা বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই সাইটগুলো স্থানীয়ভাবে পরিচালনা করার জন্য এজেন্ট নিয়োগ করে। এই এজেন্টরা টেকনিক্যালি দক্ষ লোকজনকে নিয়োগ দিয়ে জুয়ার অ্যাপস পরিচালনা করে।
বাংলাদেশ সরকার অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে নতুন সাইবার সুরক্ষা আইন অনুমোদন করেছে, যেখানে কঠোর সাজা ও মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
তিনি অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির ওপর জোর দেন এবং এই ধরনের অপরাধ থেকে যুবকদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রতিটি থানায় অনলাইন জুয়া প্রতিরোধের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আইনি পদক্ষেপ
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে দামুড়হুদা মডেল থানায় সাইবার সুরক্ষা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ অনলাইন জুয়া ও অন্যান্য সাইবার অপরাধ দমনে তাদের অভিযান চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন