সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ

 




"স্মার্ট প্রকল্পের বাস্তবায়নে কৃষকদের অধিকার ও কৃষকের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ নিয়ে আলোচনা সভা।"


মোঃ লিয়াকত আলী

দামুড়হুদা প্রতিনিধি 



চুয়াডাঙ্গা জেলা জীবননগর উপজেলার পেয়ারাতলা সন্তোষপুর কৃষি মোর্চার উদ্যোগে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এক গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।


এই সভায় কৃষি সম্প্রসারণ, পরিবেশ সুরক্ষা, এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভার মূল লক্ষ্য ছিল কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার সাথে তাদের পরিচয় ঘটানো।


সভায় ওয়েভ ফাউন্ডেশনের স্মার্ট প্রকল্পের অধীনে 'পরিবেশ ক্লাব' গঠনের প্রস্তাবটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। এই ক্লাবের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কৃষকদের মধ্যে পরিবেশ-বান্ধব কৃষি পদ্ধতির প্রচলন ঘটানো।


বক্তারা উল্লেখ করেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় পরিবেশ-বান্ধব কৃষি ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। কৃষকদের রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।


এই ক্লাব কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের কৃষি জমিকে দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদনশীল রাখতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে কৃষকরা কেবল নিজেদের ফসল উৎপাদনই বাড়াতে পারবেন না, বরং একটি সুস্থ ও টেকসই পরিবেশ গঠনেও ভূমিকা রাখতে পারবেন।


সমন্বয় সভায় কৃষকদের অধিকারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়। বক্তারা বলেন, কৃষকরা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হলেও তারা প্রায়শই তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। 


মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, সঠিক বাজার সংযোগের অভাব এবং সরকারি সহায়তার অপ্রতুলতা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা সমাধানে, ওয়েভ ফাউন্ডেশন কৃষকদের একত্রিত করে একটি শক্তিশালী বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়।


এর ফলে কৃষকরা সরাসরি ক্রেতাদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারবেন এবং তাদের পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হবে।


সভায় উপস্থিত কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হন, সেগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় বাজারগুলোতে পণ্যের চাহিদা কম থাকায় এবং মূল্য কম থাকায় তারা অনেক সময় লোকসানের শিকার হন। 


এই সমস্যা সমাধানে ওয়েভ ফাউন্ডেশন একাধিক সমাধানের প্রস্তাব দেয়। 

এর মধ্যে ছিল:


সরাসরি বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন: কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা।


অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার: ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে কৃষকদের পণ্য বিক্রির সুযোগ তৈরি করা। এর ফলে তারা স্থানীয় বাজারের গণ্ডি পেরিয়ে বৃহত্তর বাজারে প্রবেশ করতে পারবেন।


কৃষি সমবায় সমিতি গঠন: কৃষকদের একত্রিত করে সমবায় সমিতি গঠন করা, যা তাদের সম্মিলিতভাবে বাজারজাতকরণে সহায়তা করবে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাবে।


ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান যে, এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষকরা কেবল অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন না, বরং তাদের পণ্যের গুণগত মানও বৃদ্ধি পাবে।


সভায় জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং এর সফল বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। 


সভার শেষে, সকল অংশগ্রহণকারী ঐক্যবদ্ধ হয়ে কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। এই সমন্বয় সভাটি জীবননগর উপজেলার কৃষি খাতকে আরও শক্তিশালী এবং টেকসই করতে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে বলে আশা করা যায়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন