সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ

 



কুড়িগ্রামে দাম্পত্য দ্বন্দ্বে মামলা–মোকদ্দমা, জাল কাবিননামা নিয়েই এখন আলোচনা।



মাইনুল ইসলাম 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ


কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ৩ নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের যমুনা ফকির পাড়ায় পারিবারিক দ্বন্দ্বের চরম আকার ধারণ করেছে। দেনমোহরের অঙ্ক পরিবর্তন করে একাধিক কাবিননামা তৈরি, ভুয়া দেনমোহর মামলা এবং আসবাবপত্র চুরির সহ অভিযোগে স্ত্রী সুরাইয়া জান্নাত শিল্পীসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী স্বামী মো. আব্দুল হালিম।

আব্দুল হালিম পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। তিনি জানান, ২০০৬ সালের ১২ মার্চ ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী ৮০ হাজার ১০১ টাকা দেনমোহরে তার বিয়ে হয় সুরাইয়া জান্নাত শিল্পীর সঙ্গে। তাদের সংসার সুন্দরভাবে চলাকালীন সময়ে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়।

“শুরুতে সংসার মোটামুটি ভালোই চলছিল। কিন্তু বিয়ের বেশ কিছুদিন পর থেকেই স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন বিভিন্ন ধরনের দাবি করতে থাকে। তারা আমার কাছে ৩৩, শতক জমি চাইলে রাজি না হওয়ায় কলহ বাড়তে থাকে। এতে এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে,এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করে আর আমাকে স্বামীর অধিকার থেকেও বঞ্চিত রাখে।” অভিযোগ করেন হালিম।

তিনি আরও বলেন, সংসার টিকিয়ে রাখতে বারবার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে কয়েক দফায় তালাক দেন এবং পুনরায় মীমাংসার মাধ্যমে বিয়েও করেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে রেজিস্ট্রিকৃত তালাক প্রদান করেন।

হালিম অভিযোগ করেন, তালাকের নোটিশ দেওয়ার পরও ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট তারিখ দেখিয়ে ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে একটি ভূয়া কাবিননামা তৈরি করা হয়। পরে সেই কাবিননামা দেখিয়ে যৌতুক নিরোধ আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

এছাড়া ২০২৪ সালের ৩ জুন সকাল ১০টার দিকে তার অনুপস্থিতিতে স্ত্রী শিল্পীসহ অন্য আসামিরা ট্রাক ও ভ্যানযোগে তার বাড়ি থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকার আসবাবপত্র নিয়ে যায় বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

প্রথম কাবিননামা তৈরি হয়েছিল কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের কাজী অফিসে। সেখানে ৮০ হাজার টাকা দেনমোহরেই বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়।

এ বিষয়ে কাজী হাবিবুর রহমান বলেন,

“আমার অফিসে ৮০ হাজার টাকা দেনমোহরে উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। পরে শুনি আরেকটি কাবিননামা দেখানো হয়েছে, যেখানে ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা লেখা। এ বিষয়ে আমার কোনো তথ্য নেই। আমার সব নথি সঠিকভাবে সংরক্ষিত।”

অন্যদিকে, সর্বশেষ কাবিননামাটি নাগেশ্বরীর ভিতরবন্দ ইউনিয়নের কাজীর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠলেও একাধিকবার ফোন ও সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করেও ওই কাজীর সাথে সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে প্রতিবেশীর অনেকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, “হালিমের সংসারে একাধিকবার মীমাংসা হয়েছিল। কিন্তু পরে আবার কলহ শুরু হয়। শিল্পী বারবার দেনমোহর নিয়ে নতুন ঝামেলা করেছে। এখন আবার আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।”

শিল্পী বেগমের বাড়িতে যোগাযোগ করা হলে তার ভাস্তে বলেন, “আমার ফুবু (শিল্পী) আর দাদু বাড়িতে নেই। পরে কথা বলা যাবে।”

তবে শিল্পী বা তার নিকটাত্মীয়রা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

মামলার নথি অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট কাজী অফিস থেকে পাওয়া প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ আছে, ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট তারিখে বাদী ও বিবাদীর মধ্যে কোনো বিয়ে সম্পন্ন হয়নি। নিকাহ রেজিস্ট্রার বইয়েও তাদের নাম পাওয়া যায়নি।

এখন স্থানীয়ভাবে আলোচনা হচ্ছে—১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার দেনমোহরের কাবিননামা আসল না জাল। ভুক্তভোগী আব্দুল হালিমের দাবি,

“আমার স্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে নিঃস্ব করার জন্যই এই জাল কাবিননামা তৈরি করেছে। তাই আমি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ন্যায্য তদন্ত করে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”

Post a Comment

أحدث أقدم