দিনাজপুরে মহালয়া উদযাপিত সঙ্গীতাঙ্গণ পরিবারের ‘দনুজদলনী মহাশক্তি’গীতি নাট্যে মুগ্ধ দর্শকবৃন্দ
মো:মেহেদী হাসান ফুয়াদ
দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি
আশ্বিনের শারদপ্রাতে ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা ভেদ করে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জুরী। প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগ্রত হয়েছে জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনবার্তা- "যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।"
রোববার ভোরে চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় মহালয়া। এটি পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ। এর মধ্য দিয়েই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এদিনে দেবী দুর্গা দেবালয় থেকে মতের্য যাত্রা শুরু করেন। মহালয়ার মধ্য দিয়ে মূলত দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা শুরু হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে মতের্য আগমনের আমন্ত্রণ জানান।
এদিকে রোববার রাত সাড়ে ৮ টায় দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টি সর্বজনিন শ্রীশ্রী দুর্গোৎসব কমিটির সার্বিক সহযোগিতায় মন্দির প্রাঙ্গণে দেবীবরণের আয়োজন করে "সঙ্গীতাঙ্গন পরিবার"। এবছর মহালয়ার পূর্ণ তিথিতে তাদের আয়োজন ছিল ‘দনুজদলনী মহাশক্তি’ গীতি নাট্য মঞ্চস্থ। অনুষ্ঠানের মুল আকর্ষণ ছিল মেঘা ঘোষ ও সুষ্ময় ঘোষ এর পরিচালনায় সঙ্গীতাঙ্গন পরিবারের শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘দনুজদলনী মহাশক্তি’ পর্বটি। এতে চন্ডি পাঠ করেন দীপ বাড়ই। প্রায় দু’ঘন্টাব্যাপী মহালয়া পর্ব টি বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ দর্শক-স্রোতা উপভোগ করেন। শিশু শিল্পীদের সুন্দর পরিবেশনা দর্শক-স্রোতাদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়। এতে সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন মেঘা ঘোষ ও নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন দ্বিপান্বিতা ঘোষ।
এর আগে উদ্বোধনী পর্বে ‘দনুজদলনী মহাশক্তি’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাসুনিয়াপট্টি শ্রীশ্রী সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সভাপতি ডা. শান্তনু বসু। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কমিটির সাধারন সম্পাদক প্রশান্ত সাহা।
দৈনিক আজকের দেশবার্তা’র সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক চিত্ত ঘোষ এর সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাসুনিয়াপট্টি দুর্গা মন্দির কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক গৌতম সাহা, হাবিপ্রবি’র শিক্ষক অধ্যাপক ড. বিকাশ চন্দ্র সরকার, উদীচী দিনাজপুর জেলা সংসদের সভাপতি অধ্যাপক জলিল আহমেদ, নাট্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রহমান রেজু, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সাবেক সভাপতি রবিউল আউয়াল খোকা, জেলা সর্বজনীন দুর্গাপূজা সমন্বয় কমিটির সভাপতি পরিমল চক্রবর্তী তপন, চকবাজার শ্রীশ্রী হরিসভা কমিটির সহ-সভাপতি ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত, বাংলাদেশ মহানাম সংকীর্তন সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব রবীন্দ্র নাথ রায়, কীর্তনীয়া মৃদুল বসাক, মহাদেব ঘোষ, তরুন কুমার ঘোষ, অমিত কুমার কুন্ডু প্রমুখ।
উল্লেখ্য, মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ এ দিন থেকেই শুরু হবে দেবীপক্ষের। অর্থাৎ দুর্গাপূজার ক্ষণ গণনা শুরু হচ্ছে এ দিন থেকেই। মহালয়ার পর আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর দুর্গা পূজা শুরু হবে। শেষ হবে ২ অক্টোবর বিজয় দশমীর মধ্যে দিয়ে।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবছর দেবী গজে আগমন করায় ফলস্বরুপ বসুন্ধরা ভরে উঠবে শস্যপূর্ণায়। আর গমন করবেন দোলায়, দেখা দিবে মড়ক।
পুরানে বলা আছে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোনো মানুষ বা দেবতা কখনো মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলে অসীম ক্ষমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে এবং বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব সম্মিলিতভাবে ‘মহামায়া’র রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করেন এবং দেবতাদের ১০টি অস্ত্রে সুসজ্জিত সিংহ বাহিনী দেবী দুর্গা ৯ দিনব্যাপী যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও বধ করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন