নিয়োগের ষাট হাজার টাকা যেন প্রধান শিক্ষকের গলার কাটা ! অফিস বন্ধ করে চলে ধূমপান প্রধান শিক্ষকের
পুঠিয়া প্রতিনিধি:
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা জিউপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় নিয়োগ দিয়ে প্রধান শিক্ষক হাতে নিয়েছেন কয়েক লক্ষ টাকা। নিয়োগ পাওয়া নৈশ প্রহরী পদে আবুল কালাম। টাকা দিয়ে চাকরি নিয়ে বেতনের জন্য ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে।
তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় ২০০৩ সালে টাকা বিনিময়ে এবং ২০০৪ সালে তিনি যোগদান করেন। তাকে আশ্বাস দেওয়া হয় মাত্র তিন থেকে চার বছরের মধ্যেই বেতনভুক্ত হবে তার চাকরি। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বেতনভুক্ত না হওয়ায় তিনি একাধিকবার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিকট বলেন আপনাদের সবার বেতন হয়েছে তো আমার বেতনটা হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের প্রধান শিক্ষক বলেন আপনার চাকরি এখনো এমপিও না হওয়ায় বেতন হচ্ছে না। এরপরে তিনি বিভিন্ন সময় টাকা ফেরত চাইলে রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে তাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হয় বলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান।
আবুল কালামের সাথে প্রধান শিক্ষকের এই সকল ব্যবহারের কথা স্থানীয়৬ জনসম্মুখে আসার সঙ্গে সঙ্গে গত ২৪ জুলাই বিদ্যালয় ঘেরাও করতে যাই স্থানীয় জনতা।
নাম গোপন রাখা সত্বে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্কুলকে নিজের বাড়ি হিসেবে মনে করেন। তার খেয়াল খুশি মতোই চলে আমাদের বিদ্যালয়। তিনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামনে নিজের চেয়ারে বসেই নিয়মিত ধূমপানে আসক্ত থাকতেন। অনেক সময় অফিসের দরজা বন্ধ করেও তিনি ধূমপানে আসক্ত থাকেন। যে কারণে আমরা অনেক সময় স্যারের কক্ষে গন্ধের কারণে যেতে পারি না এবং কথা বলতে পারিনা। স্যারের ঘরে ব্যক্তিগত ময়লা ফেলানো ঝুড়িতে অসংখ্য কোম্পানির সিগারেটের খালি প্যাকেট আছে আপনার লক্ষ্য করে দেখতে পাবেন। যা ছোট দোকানে ও থাকেনা। এমন সংবাদের ভিত্তিতে স্কুল পরিদর্শনের সময় কথার সঙ্গে বাস্তব চিত্র মিলে যায়। ভিডিও ধারণ করতে গেলে তিনি তড়িঘড়ি করে কিছু সিগারেটের প্যাকেট জানালা দিয়ে ফেলে দেয় এবং কিছু থেকে যায়।
সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয় এর নৈশ প্রহরী আবুল কালাম বলেন, প্রধান শিক্ষক স্কুলে চাকরি দেয়ার নামে আমার নিকট থেকে ২০০৩ সালে ৬০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।
এবং তিনি আমাকে আশ্বাস দেন তিন থেকে চার বছরের মধ্যে আমি বেতনভুক্ত কর্মচারী হব। সময় পেরিয়ে গেলে যখন আমি বেতনভুক্ত কর্মচারী হতে না পারি প্রধান শিক্ষকের নিকট একাধিকবার গেলে তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে রীতিমতো ভয়-ভীতি দেখিয়ে রাখতো। আমি দায়িত্বরত ছিলাম নৈশ প্রহরীর কিন্তু তিনি আমাকে দিয়ে স্কুলের যখন ইচ্ছা তখন তার ইচ্ছামত কাজ করাতেন।
আর বছর কয়েক পরে আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে আমার সামনে মরণ ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা থাকবে না। জীবনের বড় একটা সময় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পিছনে ব্যয় করেছি।
সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে যেভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়, ঠিক সেভাবেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের সময় ৬০ হাজার টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার থাকলে আমি আমার ঊর্ধ্বতন ও কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা করব। এছাড়াও অফিস সহকারী পদে একটি নিয়োগ দিয়ে ৮ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আপনাদের সঙ্গে কোন কথা বলবো না। অফিসে বিভিন্ন ব্যান্ডের সিগারেট নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে সিগারেট খাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ বিষয়ে আমি আপনাদেরকে কিছুই বলবো না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লায়লা জাহান জানান,স্কুলের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে আমরা অবগত করেছি এবং বলেছি যদি কোন ব্যক্তি থেকে নিয়োগের টাকা নেয়া হয় একটা বিশাল বড় অন্যায়। আর যদি শিক্ষক প্রমাণ করতে পারবে যে কোন স্কুলের প্রধান শিক্ষক টাকা নিয়ে নিয়োগ দিয়েছে তাকে সেই টাকা আবার ফেরত দিতে হবে। এছাড়াও বিদ্যালয়টি সুন্দর পরিপাটি কিন্তু ছাত্র ছাত্রীর উপস্থিতি একেবারেই কম। যে উপস্থিতি আজকে আমরা দেখলাম তাতে মনে হলো ছাত্র-ছাত্রী থেকে শিক্ষকদের সংখ্যায় বেশি। আমরা ঊর্ধ্বতন ও কর্মকর্তাকে এই স্কুলের বিষয়ে অবগত করেছি পরবর্তী নির্দেশনা আসলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন