বদলগাছী সোহাসার নীলাদীঘি: কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া এক ঐতিহাসিক নির্দশন
এস, এম মোস্তাকিম, বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সোহাসা গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক নীলাদীঘি।
সুবিশাল এই দীঘির স্বচ্ছ নীল জল, সবুজ প্রকৃতি আর লোকমুখে প্রচলিত করুণ ইতিহাস আজও মানুষকে আকর্ষণ করে।
সঠিক পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দর্শনার্থীদের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই ঐতিহাসিক স্থানটি তার পূর্ণতা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, পাল শাসনামলে স্থানীয় এক রাজার শাসনাধীন ছিল এই অঞ্চল। প্রজাদের পানীয় জলের সংকট দূর করতে রাজা একটি বিশাল দীঘি খনন করার সিদ্ধান্ত নেন। কথিত আছে, দীঘি খনন সম্পন্ন হলেও তাতে পানি উঠছিল না। এতে রাজা ও প্রজারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
লোককথা অনুযায়ী, রাজা এক রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, তার একমাত্র কন্যা নীলাবতী যদি এই দীঘিতে আত্মাহুতি দেয়, তবেই দীঘি পানিতে ভরে উঠবে। স্বপ্নের কথা শুনে প্রজাদের কষ্ট লাঘব করতে রাজকন্যা নীলাবতী স্বেচ্ছায় দীঘির মাঝখানে গিয়ে আত্মাহুতি দেন। তার আত্মত্যাগের পরেই দীঘিটি কানায় কানায় পানিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে এবং সেই পানি নীল বর্ণ ধারণ করে। সেই থেকে রাজকন্যা নীলাবতীর নামে এই দীঘির নাম হয় "নীলাদীঘি"।
প্রায় ৫৩ একর জমির উপর বিস্তৃত এই দীঘিটি বর্তমানে একটি নয়নাভিরাম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এর টলটলে নীল জল, শান্ত পরিবেশ এবং চারপাশের সবুজ গাছপালা দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নেয়। প্রায় মাঝে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন।
বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যকটরা আসেন।
তবে দর্শনার্থীদের জন্য তেমন কোনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা গড়ে ওঠেনি। দীঘির চারপাশে বসার জন্য কোন আসন নেই, পাবলিক টয়লেট নেই, যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা ফলে অনেক সময় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
সোহাসা গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা সমেজ আলী বলেন, "ছোটবেলা থেকে বাপ-দাদাদের কাছে নীলাদীঘির গল্প শুনে আসছি। এই দীঘি আমাদের গ্রামের গর্ব। সরকার যদি একটু নজর দিত, তাহলে এটা অন্যতম একটা পর্যটন কেন্দ্র হতে পারত।
বদলগাছী থেকে ঘুরতে আসা একদল শিক্ষার্থী জানায়, "নীলাদীঘির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম, তেমন কোনো সুবিধাই নেই। বসার জায়গা বা খাবারের দোকানপাট নেই রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ।
স্থানীয়রা জানান, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে নীলাদীঘিকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা সম্ভব। এতে যেমন দর্শনার্থীদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে, তেমনি স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। ইতিহাস, লোককথা আর প্রকৃতির এমন অপূর্ব সমন্বয়কে কাজে লাগিয়ে নীলাদীঘি হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।
إرسال تعليق