সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ



 ১০ ঘণ্টার অপেক্ষা,জীবনের শেষ যাত্রা: চিকিৎসার অভাবে সন্দ্বীপের কিশোর আবদুর রহমানের হৃদয়বিদারক মৃত্যু


নূর মোস্তফা আলী হাসান সন্দ্বীপ 


চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের এক কিশোর, ১২ বছর বয়সী আবদুর রহমান, চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম শহরে নেওয়ার পথে সাগরে নৌকায়ই মৃত্যুবরণ করেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা নৌযানের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তার পরিবারকে। শেষ পর্যন্ত একটি ছোট নৌকায় করে রওনা দিলে পথেই থেমে যায় কিশোরটির জীবন।


অসুস্থতা ও স্থানান্তরের চেষ্টা


কালাপানিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. মানিকের ছেলে আবদুর রহমান এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছিল। অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে তাকে সন্দ্বীপের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সোমবার সকালে সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।



আবদুর রহমানের ফুফাতো ভাই এ আর সোহেল বলেন, "দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আমরা ঘাটে বসে থাকি, কিন্তু নৌযান পাচ্ছিলাম না। সাগর উত্তাল, চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিল। অবশেষে রাত ১০টার দিকে একটি ছোট লাল বোট পাই, সেটিতেই সীতাকুণ্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হই।"


সাগরের উত্তাল ঢেউ আর অন্ধকারে প্রাণপণ চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। পরিবারের সদস্যরা জানান, নৌকায় উঠেই আবদুর রহমান নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সীতাকুণ্ডের হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসকরা জানান, সে আগেই মারা গেছে।


দ্বীপবাসীর দুর্ভোগ ও ক্ষোভ


আবদুর রহমানের আরেক ফুফাতো ভাই ইকরাম হোসেন বলেন, "এটাই প্রথম নয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর আমরা আর কিছুই করতে পারি না। জরুরি চিকিৎসা, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, অপারেশন থিয়েটার—সবই এখানে অনুপস্থিত। এমন দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে।"


প্রতিবেশী মোজাম্মেল হোসেন বলেন, "এই দ্বীপের মানুষের জন্য চিকিৎসা একটি ভাগ্যের বিষয়। বারবার মানুষ এইভাবে মরছে। এটা কেবল অব্যবস্থাপনার ফল।"


সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মানস বিশ্বাস জানান, “রহমানের মলদ্বার দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এতে জরুরি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আমাদের এখানে সার্জনের কোনো পোস্ট নেই। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রামে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম।”


আবদুর রহমানের মৃত্যু শুধুই একটি পরিবারের ক্ষতি নয়, এটি দ্বীপাঞ্চলের চিকিৎসাব্যবস্থার নীরব চিত্র। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, জরুরি সরঞ্জাম ও সেবা না থাকায় দ্বীপবাসীর জীবন আজও প্রকৃতির দয়ার ওপর নির্ভরশীল। এই মৃত্যু যেন আরেকটি সতর্কবার্তা—সন্দ্বীপসহ সব উপকূলীয় এলাকার স্বাস্থ্যসেবার কাঠামো পুনর্গঠনের এখনই সময়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন