সরকারি রাস্তা দখলে চরম ভোগান্তি, অবরুদ্ধ শতাধিক পরিবার
রফিকুল ইসলাম রফিক, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার, থেতরাই ইউনিয়নের, হারুনেফড়া মৌজায় ছাইতনের তল থেকে শান্তিপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত, ১৪ ফুট প্রশস্ত সরকারি কাঁচা রাস্তা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও বৃক্ষরোপণের অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
রবিবার ( ১৫ জুন ২০২৫) বিকাল ৩ টায় সরেজমিনে দেখা যায় রেকর্ড মূলে প্রায় ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি প্রস্থ ১৪ ফুট হলেও রাস্তা জুড়ে সুপারির বাগান, পুকুর, খড়ের গাদা, ঘর উঠিয়ে পুরো রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় রাস্তাটির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
এ অবস্থায় জনগণের চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহন চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উলিপুর উপজেলা প্রশাসন, সহকারী কমিশনার (ভূমি), স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও কুড়িগ্রামের অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগে রাস্তা দখলের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব, হুমকি ও এলাকাবাসীকে জিম্মি করে রাখার বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীণ যতিন চন্দ্র (৮০) বলেন,
"আমার জন্মের পর থেকেই এই রাস্তায় চলাফেরা করছি। এখন আর এই রাস্তা দিয়ে চলা যায় না। মাটি ফেলে উঁচু করে রেখেছে, গাছ লাগিয়েছে, ঘর তুলেছে। আমরা চলব কিভাবে?"
আমেনা বেগম (৫০), গৃহবধূ, জানান, "একসময় গরুর গাড়িও চলত এই রাস্তা দিয়ে। এখন বাড়ির সীমানা আগাতে আগাতে পুরো রাস্তা দখল হয়ে গেছে। মেয়ে স্কুলে যেতে পারে না ঠিকমতো। রিকশাও ঢুকতে পারে না।"
শিক্ষার্থী তানভীর ইসলাম (১৪) জানায়,
"প্রতিদিন স্কুলে যেতে কাঁদা পেরিয়ে ছোট ছোট গর্তে পড়ে যাই। বর্ষাকালে তো আর যাওয়া যায় না।"
সচেতন নাগরিক ও সমাজকর্মী সালাউদ্দিন (৪০) বলেন, "এই রাস্তাটি পুরো অঞ্চলের মানুষের চলাচলের একমাত্র পথ। রাস্তা না থাকলে জরুরি সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। কারণ অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে পারেনি। আমরা সবাই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। রাস্তা উদ্ধার করে চলাচলের উপযোগী করতে হবে।"
রাস্তা দখলের অভিযোগে অভিযুক্ত মোঃ মহুবর হোসেন (৫০) বলেন, "আমি ১৯ শতক জমি কিনেছি, ভোগ করছি ১৭ শতক। বাকি ২ শতক রাস্তা গেছে। আমার জমির হিসাব না মিলিয়ে আমি জায়গা ছাড়ব না। ওরা নিজেরা জমি ঠিক করুক আগে।"
অন্যদিকে মোঃ রবিউল ইসলাম ও রবিউল, নামেও অভিযোগ উঠেছে, যাঁরা রাস্তার মধ্যে স্থাপনা তৈরি করেছেন, সেচযন্ত্র বসিয়েছেন এবং রাস্তার মধ্যে গরুর খড় রাখছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিযোগকারী মোঃ আইনুল হক এবং মোঃ আইনুল ইসলাম বলেন, "আমরা লিখিতভাবে সব দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি—উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউনিয়ন পরিষদ এবং কুড়িগ্রামের অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পেও। কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দখলদাররা উল্টো হুমকি দিচ্ছে।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, "অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিন তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি রাস্তা কেউ দখল করলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
"সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী রাস্তার সীমা নির্ধারণ করে দখলকারীদের উচ্ছেদ করতে আমরা প্রস্তুত। স্থানীয়দের সহযোগিতা থাকলে দ্রুত সমস্যা সমাধান করা যাবে।"
উলিপুর থানার (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা ওসি, জিল্লুর রহমান বলেন, সরকারি রেকর্ড রাস্তা কেউ দখল করে থাকতে পারবে না, আমরা তদন্ত করে, সত্যতা পেলে আইনানুপ ব্যবস্থা গ্রহণ করব ।
এলাকাবাসীর দাবি: দ্রুত রাস্তা উদ্ধার ও পুনঃনির্মাণ, হারুনেফড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার এই একটি রাস্তার ওপর নির্ভরশীল।
তাই এলাকাবাসীর জোরালো দাবি, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে দ্রুত রাস্তা উদ্ধার ও পুনঃনির্মাণ করা হোক। প্রয়োজনে সেনা বাহিনী কিংবা জেলা প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপ দাবি করছেন তারা।
এলাকাবাসীর মতে, রাস্তা না থাকায় শুধু যাতায়াতের সমস্যা নয়, জীবনঝুঁকিতে পড়ছে অসুস্থ মানুষ, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে, এমনকি জানাজা কিংবা মৃতদেহ বহন করতেও চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন