প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ, সম্ভাবনার স্বপ্ন ও অগ্রগতির প্রতিচ্ছবি
মোঃ আলী শেখ, স্টাফ রিপোর্টার :
লেখক:- ইমতিয়াজ চৌধুরী
(সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক)
প্রযুক্তির ঢেউ একদিন কেবল দূর বিদেশের তীর ছুঁয়ে ফিরত, আমরা তা দেখতাম মুগ্ধ চোখে, কল্পনার ভিতর গেঁথে রাখতাম আগামীর সম্ভাবনা। কিন্তু সময় বদলেছে, বদলেছে বাংলার স্বর ও ছন্দ। এখন প্রযুক্তি আর কেবল কোন দূরের শব্দ নয়—এটি আমাদের ঘরের এক অবিচ্ছেদ্য সত্তা, মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া উন্নয়নের এক অদম্য ধারা।
এক সময় এই বাংলার মানুষ সূর্যের আলোয় গুণত সময়, মাটির গন্ধে নির্ণয় করত বৃষ্টি আসছে কি না। আর এখন? প্রযুক্তির নান্দনিকতায় একজন কৃষকও জানে আগামীকাল তাঁর ধানের জমিতে বৃষ্টি হবে কি না, অথবা কোন কীটনাশক প্রয়োগে শস্য নিরাপদ থাকবে। প্রযুক্তি এখন বাংলার হাটে, ঘাটে, মাঠে—মোবাইল ফোনের পর্দা থেকে শুরু করে ডিজিটাল শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এমনকি আদালতের ভার্চুয়াল কোর্ট পর্যন্ত।
আজ বাংলাদেশ শুধু উন্নয়নশীল নয়—একটি রূপান্তরমান রাষ্ট্র।
একসময় যেখানে "তলাবিহীন ঝুড়ি" ছিল আমাদের তকমা, সেখানে এখন আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি সম্মেলনে আমরা গর্বিত মুখে উপস্থাপন করি নিজস্ব উদ্ভাবন। ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমরা বিশ্বে দ্বিতীয়, স্টার্টআপ গড়ে তুলি নিজের মেধায়, এবং কিশোর তরুণেরা এখন শুধু চাকরি চায় না—তারা চাকরি দেয়।
প্রযুক্তির এই ধারা শুধু অর্থনীতির জন্য নয়, সামাজিক পরিবর্তনেরও হাতিয়ার। নারী এখন ঘরে বসে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিক্রি করে, বয়স্ক মানুষ ভার্চুয়াল ডাক্তার দেখায়, শিশুরা অনলাইনে শেখে বিশ্বমানের পাঠ্যবই।
বাংলাদেশ যে বদলে যাচ্ছে তা আর পরিসংখ্যানে নয়—মানুষের চোখে, জীবনের গতিতে, মননের পরিসরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
আগামীদিনে বাংলাদেশ কেমন হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নিহিত আছে আমাদের বর্তমান প্রস্তুতিতে। প্রযুক্তির সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করলে আমরা গড়ে তুলতে পারি একটি স্মার্ট বাংলাদেশ—যেখানে নগর হবে পরিবেশবান্ধব, শিক্ষা হবে প্রযুক্তি-ভিত্তিক, স্বাস্থ্যসেবা হবে সবার জন্য সহজপ্রাপ্ত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), বিগ ডেটা, ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT)—এসবই যুক্ত হবে আমাদের জীবনের সঙ্গে।
যেমন একজন প্রান্তিক কৃষক মোবাইলের মাধ্যমে সরকারি কৃষি সহায়তার খবর পাবেন, এক হতদরিদ্র মা অনলাইন স্বাস্থ্যপরামর্শে সন্তানের চিকিৎসা করতে পারবেন, কিংবা এক তরুণ উদ্যোক্তা নিজের মোবাইল দিয়ে বিদেশে পণ্য বিক্রি করে ঘরে আনবেন বৈদেশিক মুদ্রা।
⚠️ যন্ত্রে নয়, হৃদয়ে হোক জয়
তবে প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রায় কিছু সতর্কতার প্রয়োজনও অনস্বীকার্য। প্রযুক্তি যেন আমাদের মনুষ্যত্ব না কেড়ে নেয়, আমাদের শিকড় ভুলিয়ে না দেয়। আমরা যেন যন্ত্রের দাস হয়ে না পড়ি।
বিজ্ঞানের ব্যবহার হোক জীবন গঠনের জন্য, আত্মার বিকাশের জন্য—not কেবল দৈহিক আরাম বা সামাজিক আস্ফালনের জন্য।
শিশুদের হাতে মোবাইল দিলে যদি খেলাধুলার মাঠ খালি হয়ে যায়, যদি সম্পর্ক হয় কৃত্রিম, আর জীবনের সৌন্দর্য হয় কেবল স্ক্রিনে বন্দী—তবে প্রযুক্তি আমাদের আলোকিত করবে না, বরং নিঃসঙ্গ ও নির্জীব করে তুলবে।
📌 উপসংহার
বাংলাদেশ আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।
প্রযুক্তির হাত ধরে আমরা এগিয়ে যেতে পারি এক নতুন ইতিহাসের দিকে, যেখানে কৃষক, শ্রমিক, নারী, শিশু—সবাই সমানভাবে উপকৃত হবে। তবে এই যাত্রা হবে সফল, যদি আমরা প্রযুক্তিকে দেখি সহযাত্রী হিসেবে, কর্তৃপক্ষ নয়; যদি আমরা মানুষকেই রাখি প্রযুক্তির কেন্দ্রে।
আগামীর বাংলাদেশ যেন হয় এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে প্রযুক্তির অগ্রগতি মেলে মানবিকতার সাথে, যেখানে যন্ত্র নয়—মানুষই মুখ্য, প্রযুক্তি শুধু তার হাতের বাতি।
“হোক সে হাত এক ক্লান্ত মেহনতির, কিংবা কিশোর উদ্যোক্তার—তার হাতে থাকুক প্রযুক্তির আলো, হৃদয়ে থাকুক বাংলার শিকড়ের তাপ।”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন