সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ

 



সন্দ্বীপে ৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংকট

শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ


চট্টগ্রাম  (সন্দ্বীপ) প্রতিনিধি


সন্দ্বীপ উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চরম শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিয়েছে। নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়ছে না। উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সন্দ্বীপে মোট ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪১টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০ জনের নিচে। এর মধ্যে ৬টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ জনের মধ্যে।


বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকসংখ্যা ৩ থেকে ১০ জন হলেও, মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হতাশাজনকভাবে কম। উদাহরণস্বরূপ, উড়িরচর বাটাজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী মাত্র ৫ জন। মুছাপুর গুরুদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে আছে ৮ জন, একই অবস্থা বশিরিয়া বিদ্যালয়েও।আবার অনেক বিদ্যালয় আছে যেখানে স্বামী -স্ত্রী দুই জনেই শিক্ষক,উদাহরণস্বরূপ পূর্ব মুছাপুর মোস্তাফিজুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।ঐ বিদ্যালয়ে মাস্টার ফখরুল ইসলাম প্রধান ও তার স্ত্রী সহকারি শিক্ষক হিসেবে চাকরির শুরু থেকে একই বিদ্যালয়ে এখনো  বহাল আছেন।


শিক্ষকেরা বলছেন, অভিভাবকদের মধ্যে বেসরকারি  ও কিন্ডারগার্টেনমুখী প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে, যা সরকারি বিদ্যালয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, অভিভাবকরা বলছেন,সরকারি বিদ্যালয়ের থেকেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান তুলনামূলক ভালো হওয়ায় তারা সেই দিকে ঝুঁকছেন।


উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মাহমুদুল হক  বলেন, “শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।আমরা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করেছি—বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বোঝানো, বিদ্যালয়ে মিডডে মিল, কো-কারিকুলার কার্যক্রম চালু করা—যাতে শিক্ষার্থী ফেরানো সম্ভব হয়।কোন কোন বিদ্যালয়ে স্বামী স্ত্রী একসাথে শিক্ষকতা করে তাও ক্ষতিয়ে দেখা হবে। বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষা মান উন্নয়নের দিকেও আমাদের নজর রয়েছে।


উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৮ সালে সন্দ্বীপের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৪ হাজার। অথচ ২০২৫ সালে এসে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২১,৩৯২ জনে, যা প্রায় ৬০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস। অথচ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী, প্রতি শিক্ষক প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর অনুপাতে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত থাকার কথা।


এমন প্রেক্ষাপটে শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রতি অভিভাবকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন