শরিফুল ইসলাম, নাটোর , ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গবাদি পশু নাটোর উপজেলা প্রাণিসম্পদে আসা রোগীদের নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন ভেটেরিনারি সার্জন ডা: এস এম মেহেদী হাসান। গবাদি পশুর চিকিৎসা সেবা নিতে আসা খামারিরা বলেন বর্তমানে আমরা আমাদের গবাদি পশুর চিকিৎসা নিয়মিত সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট। ডা:এস এম মেহেদী হাসান ভোরের চেতনাকে বলেন নাটোর উপজেলা প্রাণি সম্পদের চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিত, গবাদিপশুর চিকিৎসা নিতে আসা খামারিদের দ্রুত সেবা, খামারিদের হয়রানি বন্ধে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন নাটোর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোঃ মোস্তফা জামান ।
ভেটেরিনারি সার্জন ডা: এস এম মেহেদী হাসান আরো বলেন বর্তমানে নাটোরে গবাদি পশুর ভাইরাসজনিত রোগ লাম্পিস্কিন ডিজিজ রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে। এই রোগ বিষয়ে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে আমরা ক্যাম্পেইন করে গবাদি পশুর রোগ সম্পর্কে আলোচনা চালাচ্ছি।লাম্পি যেহেতু ভাইরাস দ্বারা এ রোগটি সৃষ্টি হয়, কাজেই কোন এন্টিবায়োটিক এ রোগে কাজ করে না। মাত্রা অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যাবহারের ফলে প্রাণি দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পরে।
প্রতি ১০০-২০০ কেজি ওজনের প্রাণির জন্য। নিন্মোক্ত ঘরোয়া চিকিৎসায় ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।
১/ প্যারাসিটামল ট্যাবলেট -----২টি।
২/ খাবার সোডা----------------৫০গ্রাম
৩/ নিমপাতা বাটা---------------২৫গ্রাম
৪/ লবণ-------------------------২৫গ্রাম
৫/ গুড়--------------------------৫০গ্রাম
ব্যাবহারের নিয়মঃ
উপরোক্ত উপাদান ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে সকাল বিকাল ৭ দিন খাওয়ালে এ রোগ থেকে প্রাণি দ্রুত সেড়ে উঠে। তবে,ক্ষত হয়ে গেলে সালফাভেট বা সুমিডভেট পাউডার লাগাতে পারেন।
আক্রান্ত গরুকে অবশ্যই মশারির ভিতরে খোলা ছায়া যুক্ত জায়গায় রাখতে হবে এবং আক্রান্ত গরুটির সাথে বন্ধু সুলভ আচারন করতে হবে মনে রাখবেন গরুটি আপনার বাড়ির একজন সদস্য এবং মহা সম্পদ।
গোয়াল ঘর বা গরু রাখার জায়গা জীবাণু নাশক দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।কোন ক্রমেই মশা মাছি প্রানির শরীরে বসতে দিবেন না, মশা মাছি এই রোগের একমাত্র বাহক।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই দেশে ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ বা এলএসডি নামে আরেক ভাইরাসের দেখা মিলেছে। এ ভাইরাস গবাদি পশুকে আক্রমণ করে থাকে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ ভাইরাসে শত শত গরু আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর কোনো প্রতিষেধক না থাকায় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে খামারিরা। এলএসডি গরুর জন্য একটি ভয়ংকর ভাইরাসজনিত চর্মরোগ, যা খামারের ক্ষতির কারণ।
জানা যায়, ১৯২৯ সালে সর্বপ্রথম আফ্রিকা মহাদেশের জাম্বিয়াতে এ রোগ দেখা দেয়। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে মহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। মশা-মাছি বাহিত রোগটি মূলত মশার মধ্যমেই বেশি ছড়ায়। আক্রান্ত গরু সুস্থ হতে দীর্ঘদিন সময় লাগে। দিন দিন গরু-বাছুর দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মারাও যায়। একটি খামারকে অর্থনৈতিকভাবে ধসিয়ে দিতে খুরা রোগের চেয়েও অনেক বেশি ভয়ংকর রোগ এটি।
বাংলাদেশে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রথম দেখা দেয় ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে। এরপরই মাঠে নামে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তদন্ত টিম। তখন দেশের ১২ জেলায় ৪৮ হাজার গরুর মধ্যে এ রোগের লক্ষণ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। এ বছর আবার এ রোগটি দেশের বিভিন্ন জেলায় দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আফ্রিকা মহাদেশে ৪০ শতাংশ গরু এ রোগে মারা গেছে বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে।
রোগের কারণ: মূলত এটি একটি পক্স ভাইরাস বা লাম্পিং স্কিন ডিজিজ ভাইরাসজনিত রোগ। ভাইরাসটি Poxviridae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত Capripox virus গণের ভাইরাস। ছাগল ও ভেড়ার পক্স ভাইরাসের সাথে এ ভাইরাসের খুবই সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এ ভাইরাস গরু ছাড়া মহিষেও ছড়াতে পারে। এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। ছাগল ও ভেড়ায় প্রতিলিপি তৈরি করলেও এরা সাধারণত লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয় না। এ ছাড়াও এ ভাইরাস মানুষকে আক্রমণ করে না।
আক্রান্তের সময়: রোগটি প্রধানত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে বা বসন্তের শুরুতে মশা-মাছির বেশি বিস্তারের সময় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
রোগের লক্ষণ: এলএসডি আক্রান্ত গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবার রুচি কমে যায়। জ্বরের সাথে সাথে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়, দুই পায়ের মাঝে পানি জমে যায়। পশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পিন্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়। আর এ ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে। শরীরের কোথাও কোথাও ফুলে যায়। যা ফেটে টুকরা মাংসের মত বের হয়ে ক্ষত হয় এবং পুঁজ কষাণি বের হয়। পাকস্থলী বা মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরুর পানি পানে অনীহা তৈরি হয় এবং খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।
প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মত: এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। শুধু সচেতনতার মাধ্যমেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হয়। প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিপাইরেটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। নডিউল বা গুটি ফেটে গেলে বা সেকেন্ডারি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন দমন করার জন্য সিস্টেমিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। এ ছাড়াও ফেটে যাওয়া গুটিতে যেন মশা-মাছি বসতে না পারে, সে জন্য ফ্লাই রিপিলেন্ট ব্যবহার করা যায়। তবে ২১ দিন পর সাধারণত এমনিতেই রোগটি সেরে যায়। তাই লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলেই দ্রুত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা রেজিস্ট্রার্ড প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন ভেটেরিনারি সার্জন ডা:এস এম মেহেদী হাসান নাটোর সদর প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে যোগদান করার পর থেকে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে নির্দেশনা দিয়ে থাকি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন