সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ

 



হারিয়ে যাওয়া গাদন খেলায় দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়।


মোঃ লিখন 

উপজেলা প্রতিনিধি (গাংনী )


 গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গাদন খেলার আয়োজন করা হয়েছে গাংনী থানার বামন্দি ইউনিয়নের ঝোড়াঘাট গ্রামে। 

হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর মধ্যে ছিল মানুষের একটি নাড়ির টান। হৃদয়ের ভিতর নাড়া দিত এক অন্যরকম ভালোবাসা।সেই সব খেলা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।গ্রাম বাংলার খেলার মধ্যে যে মানুষের প্রাণের আনন্দের সঞ্চার ছিল তা ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।গ্রামের মানুষ যখন জানতে পারতো কোন খেলা আছে সেদিনকার কাজ সকাল-সকাল সেরেই প্রস্তুতি নিয়েই চলে যেত খেলা দেখতে কিন্তু সেসব যেন আজ শুধুই স্মৃতি। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সেই খেলা।আধুনিক খেলাগুলো শহর থেকে প্রবেশ করেছে গ্রামে।


দিন দিন প্রবীণ ব্যক্তিরাও হারিয়ে যাচ্ছে আর তার সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ খেলাধূলা।খেলায় পুরুষ দর্শকদের পাশাপাশি নারী দর্শকদেরও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। 



দীর্ঘদিন পর উপজেলার ঝোড়াঘাট গ্রামবাসীর আয়োজনে বিবাহিত বনাম অবিবাহিত গাদন  খেলা অনুষ্ঠিত হয়।খেলায় বিবাহিত দল ২-১ বিজয়ী হয়।হারিয়ে যাওয়া এই গাদন খেলা দেখতে উৎসুক জনতার ভীড় লক্ষ্য করা যায়।দীর্ঘদিন পরে এ খেলা দেখতে পেয়ে আনন্দিত তারা।পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।




গ্রামবাংলার খেলাধুলার মধ্যে যেসব খেলাগুলো হারাতে বসেছে তাদের মধ্যে হা-ডু-ডু, গাদন,গোল্লাছুট,কুতকুত, হাড়িভাঙা, দড়ি লাফানো, দড়ি টানাটানি,কানামাছি ভৌ ভৌ,লাঠিখেলা,চোর ডাকাত, মার্বেল,ষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই সহ নানা খেলা প্রচলন ছিল এ গ্রামবাংলায়।

আগামী প্রজন্মের কাছে এগুলো হবে শুধুই গল্প।গ্রাম বাংলার খেলাধুলা চলাকালীন সময়ে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামতো।তাই আদি গ্রাম সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই গ্রামীণ ফেডারেশন গঠন করা অত্যন্ত জরুরী। 




খেলা দেখতে আসা দর্শকদের দাবি, যদি গ্রামীণ খেলাধুলা গুলোকে আবার ফিরিয়ে আনা যায় তাহলে মানুষের মাঝে আবার আনন্দ ফিরে আসবে।আর খেলাগুলো হারিয়ে গেলে আগামী প্রজন্মের কাছে এই খেলাগুলোর কোন চিহ্নই থাকবে না। 




ঝোড়াঘাট গ্রামের খেলার পরিচালক পলাশ আহমেদ বলেন,শহর থেকে গ্রামে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া আর এর সাথে সাথে প্রায় বিলীন হতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্য খেলা গুলো।একসময় মানুষের ভিতরে অন্যরকম আনন্দ ও ভালোবাসার অনুভূতি কাজ করতো গ্রাম্য খেলা গুলো নিয়ে। যখন খেলাগুলো চলত তখন হাজার হাজার দর্শকে মুখরিত থাকতো পুরো খেলার মাঠ।গ্রামে এখন দেখা যায় শুধু ফুটবলা,ক্রিকেট আর ব্যাডমিন্টন।বাকি খেলাগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। 

তাই ঝোড়াঘাট গ্রামের সবাই একসাথে হয়ে হারিয়ে যাওয়া গাদন খেলার আয়োজন করে।



আয়োজক জাহিদ হাসান আরও বলেন, বিকেলে স্থানীয়দের উদ্যোগে বিবাহিত বনাম অবিবাহিত  খেলাটি করানো হয়। অনেক দিন পর খেলাটি দেখে গ্রামের মানুষ অনেক খুশি এমনকি আমি নিজেও খুব আনন্দিত


খেলায় বিবাহিতরা জয়লাভ করে(২-১)। হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাগুলো ফিরিয়ে আনা আমাদের সকল উচিত।

অবিবাহিত দলের হয়ে গাদন করেন ফয়সাল

আর বিবাহিত দলের হয়ে গাদন করেন ওমর ফারুক ও খেজমত আলী



খেলা দেখতে আসা সিদ্দিক আলী বলেন,গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলো আর নেই বললেই চলে,হয়তো বছরের কোন এক সময় শোনা যায় কোন  গাদন খেলা হচ্ছে। তবে সেই খেলার কথা শুনলে এখনো ছুটে যাই মানুষ।কারণ হৃদয়ের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে এই গাদন খেলা।আমাদের সন্তানদের সেই গল্প শোনালে এখন আগ্রহ দেখায় না। খেলাধুলার প্রতি তাদের অনিহা।কারণ  তারা হাতে পেয়েছে মোবাইল ফোন।পাবজি আর ফ্রী ফায়ার গেম খেলেই কাটিয়ে দেয় সময়। 




সাবেক গাদন খেলোয়াড় নাহির বিশ্বাস জানান,বয়সের ভারে এখন আর তেমন চলাফেরা করতে পারি না। গ্রাম বাংলার সেই গাদন খেলার কথা গুলো মনে পড়ে কিন্তু কাউকে খেলতে দেখি না।


বাজারে খেলার মাঠ রয়েছে সেখানেই বসে থাকি যুবসমাজ মাঝে মাঝে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলে কিন্তু এই খেলাধুলা দেখে আমাদের আর সেই তৃপ্তি মেটে না। তাই হারিয়ে যাওয়া গ্রামবাংলার খেলা গুলো ফিরিয়ে আনতে হলে গ্রামের জনসচেতন মানুষগুলোকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে তাহলে প্রাণ ফিরে পাবে আবার সেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। 




বামন্দী ইউপি চ্যানেল চেয়ারম্যান শাহ্আলম জানান,গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলো ফিরে আনা আমাদের সকলের কর্তব্য। প্রত্যেক বছর যদি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কিছু খেলার আয়োজন করা হয় তাহলে দর্শক ফিরে যাবে হারানো খেলার দিকে।তাই যারা এই গাদন খেলার আয়োজন করেছে তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন