ভুয়া চিকিৎসকের ফাঁদে শ্রীপুর, অনুসন্ধানে গিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা
মোফাজ্জল হোসেন, শ্রীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে রোগী দেখে আসছেন, অথচ তার নেই কোনো স্বীকৃত মেডিকেল ডিগ্রি। বিষয়টি জানার পর অনুসন্ধানে গিয়ে হামলার শিকার হন চারজন তরুণ সাংবাদিক। তিন ঘণ্টা দেরিতে পুলিশ পৌঁছায় ঘটনাস্থলে। ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক গাফিলতি।
তথ্য অনুযায়ী, কামাল হোসেন প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বরমী বাজারের শাহ ফার্মেসিতে এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাপ্তা বৈরাগবাড়ির সেবা ফার্মেসিতে বসে রোগী দেখেন। অনুসন্ধানকারী সাংবাদিকদের টিমে ছিলেন দৈনিক আজকের বাংলা পত্রিকার জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি, ঢাকা সময় ২৪-এর উপজেলা প্রতিনিধি ও বাংলা দূতের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি।
সাংবাদিকরা প্রথমে বরমীর শাহ ফার্মেসিতে গেলে মালিক জানান, এক ওষুধ কোম্পানির লোকজন কামালকে “ভালো ডাক্তার” বলে পরিচয় দেয়। তারা বলেন, ফার্মেসিতে রোগী দেখলে ব্যবসা ভালো চলবে, এমন আশ্বাসে কামালকে বসার সুযোগ দেওয়া হয়। ফার্মেসিতে কিছু কাগজ জমা দিয়ে ডাক্তার পরিচয় নেন কামাল।
সাংবাদিকরা ফোন দিলে কামালের স্ত্রী জানান, তিনি নিয়মিত বিভিন্ন ফার্মেসিতে চেম্বার করেন এবং বর্তমানে বৈরাগবাড়ি এলাকায় সেবা ফার্মেসিতে রাত ১০টা পর্যন্ত বসেন। এরপর সাংবাদিকরা কামালের তথ্য জানতে সেবা ফার্মেসিতে যান। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়, কোথায় এমবিবিএস করেছেন। তিনি বলেন, তিনি "DMBC" কোর্স করেছেন এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২১২৪৯৮ রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (BMDC) ওয়েবসাইটে নম্বরটি যাচাই করে কোনো তথ্য মেলেনি।
এই সময় ফার্মেসির মালিক আকরাম হোসেন ও তার ভাই সোহাগ মিয়া (একজন গ্যারেজ ব্যবসায়ী) সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ওয়েবসাইটে না আসলে কী হইছে? তরা ভুয়া সাংবাদিক।” এরপর তারা সাংবাদিকদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় ও আটকের চেষ্টা করে। পরে স্থানীয় শিক্ষকরা এগিয়ে এসে সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন।
ঘটনাটি শ্রীপুর মডেল থানার ওসি বারেককে জানানো হলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তিন ঘণ্টা পর। সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে জানান, প্রশাসনের এমন ধীর প্রতিক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। স্থানীয়রা জানান, কামাল হোসেন কোনো স্বীকৃত ডাক্তার নন। তিনি একজন “পলিপ্যাথি ডাক্তার” হিসেবে পরিচিত এবং বিএনপির কিছু প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় এসব প্রতারণা করে যাচ্ছেন।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টেকনিক্যাল সাপোর্ট অফিসার জানান, “এই বিষয়টি খুবই গুরুতর। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। ১০ তারিখের পর যেকোনো সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।”
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হলো, ভুয়া ডাক্তারদের দৌরাত্ম্য কতটা ভয়ংকর হতে পারে এবং সেই সঙ্গে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা কতটা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। প্রশাসনের উচিত দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন