অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া তুষারের
মো:মেহেদী হাসান ফুয়াদ
দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি
চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশের পাঁচটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের ধুলোট গ্রামের তুষার চন্দ্র রায়। দরিদ্র পরিবারের এ তরুণ কোনোমতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অর্থ জোগাড় করতে পারলেও পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ৪৩তম, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২৫তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪০তম এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ১১৫৪তম স্থান অর্জন করেন তুষার। পরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন।
তুষারের মা সুমিত্রা বালা রায় জানান, বাবা উপেন্দ্র নাথ রায় যখন মারা যান, তখন তুষার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তার পর থেকে পরিবারের হাল ধরেছেন তিনি নিজেই। দুই সন্তানকে নিয়ে দিনমজুরের কাজ করেই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে লড়ছেন। ছোট ছেলে এবার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। অভাবের সংসারে হাল ধরার জন্য একসময় মাকে সাহায্য করতে কিশোর তুষারকেও নেমে পড়তে হয়েছে মাঠে দিনমজুরির কাজে। কিন্তু তাঁর চোখে ছিল একটি স্বপ্ন—উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা।
তুষার চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি সনকা দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর বীরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনাই প্রায় ছেড়ে দিতে বসেছিলাম। যেখানে খাবার জুটত না, সেখানে পড়ালেখার খরচ কোথা থেকে আসবে। ঠিক তখনই আমার জীবনে আশীর্বাদের মতো আসেন বীরগঞ্জের ভিক্টোরি প্লাস বিশ্ববিদ্যালয় ও নার্সিং ভর্তি কোচিংয়ের পরিচালক সোহেল রানা। তিনি শুধু প্রেরণাই দেননি, আমার পড়ালেখার দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।’
তুষার জানান, বাড়িতে থাকার জায়গা বলতে শুধু আছে বাঁশের বেড়ার একটি ছোট্ট ঘর। সেই কুঁড়েঘর থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখেছেন আইনজীবী হওয়ার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু তাঁর উচ্চশিক্ষার পথে শুরুটা যতটা গর্বের, বাকি পথটা ঠিক ততটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ভর্তির খরচ কোনোমতে জোগাড় হলেও সামনের দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের খরচ বহন করা তাঁর পরিবারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
ভিক্টোরি প্লাস কোচিংয়ের পরিচালক সোহেল রানা বলেন, ‘তুষার একজন অদম্য মেধাবী, সে আমাদের বীরগঞ্জের গর্ব, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমি বীরগঞ্জ উপজেলার মেধাবীদের নিয়ে কাজ করছি। এমন প্রতিভাবানেরা একটু সুযোগ পেলেই বিশ্ব জয় করতে পারে। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ, আসুন তুষারের পাশে দাঁড়াই। তুষার থেমে গেলে সেটি হবে আমাদের সবার ব্যর্থতা। একজন অদম্য মেধাবী তরুণের স্বপ্ন যেন শুধু অভাবের কারণে থেমে না যায়, এটাই আজকের দাবি। দেশপ্রেমিক, শিক্ষানুরাগী, মানবিক এবং সামর্থ্যবান সবার প্রতি আহ্বান তুষারের পাশে দাঁড়ানোর।’
পাল্টাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তুষারের মতো ছেলেরা শুধু আমাদের নয়, পুরো উপজেলার গর্ব। তার মেধা ও নিষ্ঠা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা, আমি ব্যক্তিগতভাবে তার পাশে থাকার চেষ্টা করব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন, ‘তুষারের মতো মেধাবী শিক্ষার্থীরা আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ। প্রতিকূল পরিবেশেও সে যেভাবে সংগ্রাম করে দেশের শীর্ষ বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোতে চান্স পেয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তুষারের বিষয়ে ইতিমধ্যে অবগত হয়েছি এবং খোঁজ নিচ্ছি কীভাবে তাকে সহযোগিতা করা যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করতে চাই, তার পড়ালেখা যেন টাকার জন্য থেমে না যায়, সেই চেষ্টা করব।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন