সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ

 



রাজনীতির নিচে চাপা পড়ছে “জুলাই গ্রাফিতি”!


মোফাজ্জল হোসেন, শ্রীপুর প্রতিনিধি


গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা উড়ালসড়কের নিচে দেয়ালে আঁকা হয়েছিল ইতিহাস আর শহরের সৌন্দর্যচেতনায় ভরপুর “জুলাই গ্রাফিতি”। এই গ্রাফিতিগুলো শুধু চিত্রকর্ম ছিল না, বরং একেকটি দেয়ালজুড়ে কথা বলত আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর নাগরিক দায়িত্ববোধের।


এলাকার মানুষজনের চোখে এগুলো ছিল হাঁটার পথে হঠাৎ থেমে যাওয়ার মতো, মুগ্ধ হওয়ার মতো কিছু। রঙ, রেখা আর চিন্তার নিপুণ সংমিশ্রণে গড়া এসব শিল্প যেন শহরের ব্যস্ততা আর কোলাহলের মধ্যেও এক টুকরো স্বস্তি এনে দিত।


কিন্তু সেই দেয়ালগুলোর ওপর এখন চলছে নির্মম রাজনৈতিক দখল। গ্রাফিতির বুক চিরে ঠুকে দেওয়া হচ্ছে পেরেক, তার ওপর সাঁটানো হচ্ছে একের পর এক রাজনৈতিক পোস্টার। কে কার চেয়ে বড় নেতা, কে কোন দলের লবিং করে, কার পোস্টার আগে থাকবে—এই প্রতিযোগিতার মাঝেই হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পের সৌন্দর্য, শিল্পীর শ্রম আর মানুষের বোধ।


এখন সেই দেয়ালগুলোর চিত্র আর চোখ জুড়ানো নয়, বরং চোখে লাগে। রঙচটা পোস্টার আর দলীয় প্রচারনায় চাপা পড়ে গেছে শিল্পের নিঃশব্দ চিৎকার। পৌর কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে নিরব, যেন দেয়ালে কী হচ্ছে তাতে তাদের কোনো দায় নেই। অথচ এসব গ্রাফিতি কোনো একক শিল্পীর নয়—এগুলো ছিল জনসম্পদ, শহরের সৌন্দর্যচর্চার একটি বড় প্রতীক।


বিভিন্ন সচেতন মানুষ এবং এলাকাবাসীর মতে, রাজনীতি যদি সত্যিই মানুষের কল্যাণে হয়, তবে সেটি কখনোই শহরের সৌন্দর্য ধ্বংস করে নিজের জায়গা তৈরি করে না। বরং রাজনীতি হওয়া উচিত এমন, যা শিল্প, সংস্কৃতি আর মানুষের আবেগকে সম্মান করে। তারা বলছেন, দেয়াল হোক শিল্পীর, দেয়ালে নয় দলীয় প্রতিযোগিতা।


এই বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে—এটাই কি রাজনীতির রুচি?

শিল্পের ওপর পেরেক মারা কি উন্নয়নের অংশ হতে পারে?


আজ প্রয়োজন দায়িত্বশীলতা, প্রয়োজন সৃজনশীলতাকে সম্মান জানানো। নয়তো একদিন হয়তো পুরো শহরটাই হয়ে উঠবে শুধুই পোস্টারের শহর—যেখানে থাকবে না কোনো রঙ, থাকবে না কোনো অনুভব, থাকবে না "জুলাই গ্রাফিতি"র মতো শিল্পময় স্মৃতি।

Post a Comment

أحدث أقدم