সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ





 পুঠিয়ায় বিকেলে লাশ দাফন,রাতে বিচারের দাবিতে থানায় হাজির পাঁচ ভাই


পুঠিয়া প্রতিনিধি:


রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে হাবিবা বেগম (২০) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১২-জুন) ভোররাতে উপজেলার কান্দ্রা আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার মায়ের বাড়ির বাথরুমে বাঁশের তীরে রশি পেঁচিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।


নিহত হাবিবা বেগম পুঠিয়া উপজেলার কান্দ্রা গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমানের মেয়ে। প্রায় এক বছর আগে তার বিয়ে হয় মো. ইব্রাহিম ওরফে হাসিবুর নামে এক মাদ্রাসার শিক্ষকের সঙ্গে। তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।


বিয়ের পর থেকেই হাবিবাকে শ্বশুরবাড়িতে স্বামী, শাশুড়ি ও দেবরের নির্যাতনের শিকার হতে হতো। এসব সহ্য করতে না পেরে ২ জুন তিনি বাবার বাড়িতে চলে আসেন। বিষয়টি মীমাংসার জন্য ১৪ জুন সালিশ হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই তিনি আত্মহত্যা করেন।


বৃহস্পতিবার রাতে খাবার শেষে পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়লে ভোররাতে হাবিবা বাথরুমে গিয়ে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। মায়ের আর্তচিৎকারে পরিবারের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।


নিহতের মা রুমিনা বেগম জানান,বড় ভালোবেসে মেয়েকে মাদ্রাসার শিক্ষক হুজুরের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলাম। বিয়ের পর থেকেই টাকার জন্য চাপ দিত। কিস্তি তুলে ঘরভর্তি আসবাবপত্র দিয়েছি, মোটরসাইকেল দিয়েছি। ঈদের আগে ৭০ হাজার টাকা ধারও নিয়েছে, তবুও শান্তি দেয়নি। প্রায়ই মারধর করতো। নির্যাতনের জেরেই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।


তিনি আরও বলেন,মেয়ের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল, যা লাশ ধোয়ানোর সময় খেয়াল করি। তখন আমার মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না। স্থানীয় মেম্বার সোহাগসহ কয়েকজন যেভাবে সই করতে বলেছে, আমি সেভাবেই করেছি। এখন আমি আমার মেয়ের মৃত্যুর সঠিক বিচার চাই।”


নিহতের ভাই মামুন বলেন,আমরা অশিক্ষিত মানুষ, আইন-কানুন তেমন বুঝি না। মেম্বারসহ কয়েকজন আমাদের ভয় দেখিয়ে বলে, যদি জামাই উল্টো মামলা করে তাহলে ফেঁসে যাবো। পোস্টমর্টেম করে কোনো লাভ নেই, তাই দ্রুত সই দিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়। পরে যখন জানতে পারি বোনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল, তখন আমাদের আর কিছু করার ছিল না। এখন আমরা সঠিক বিচারের আশায় এগোচ্ছি।


নিহতের পরিবার দাবি করে, পরিবারের সকল সদস্যের সম্মতি বা সই না নিয়েই থানা থেকে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকেলে লাশ দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর রাতেই ছয় ভাই একসঙ্গে পুঠিয়া থানায় গিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দিতে গেলে থানা পুলিশ তাদের কোনো অভিযোগ গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দেয়।


এস এম মেহেদী হাসান, মো. সারোয়ার জাহান, মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান ফারুক , এস এম মাহফুজ উর রহমান ও এস এম মশিউর রহমান সকলেই নিহত হাবিবার ভাই। তারা জানান, “আমরা একই পিতার ৯ ভাই ২ বোন। সবাই বিভিন্ন জায়গায় থাকি, তাই আসতে দেরি হয়েছে। আমাদের অজান্তেই লাশ দাফনের অনুমতি দিয়েছে থানা। এরপর আমরা থানায় গিয়ে বিচার চাইতে গেলে, অভিযোগ নেয়নি। এখন আমরা আদালতের দ্বারস্থ হবো আইনজীবীর সঙ্গে কথাও বলেছে।” 


এ বিষয়ে নিহতের ভাইয়েরা থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিল কিনা আর অভিযোগ হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে পুঠিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন বলেন এ ধরনের কোন অভিযোগ বা ঘটনা ঘটেনি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন