রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন স্বৈরাচারের দখলে
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজাদপুর —
জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা যখন ফ্যাসিস্ট দমননীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামছে, ঠিক তখনই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র যেন একেবারে ভিন্ন। একদিকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও দমননীতির বিরুদ্ধে স্লোগান, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অরাজনৈতিক বলে পরিচিত বিভিন্ন সংগঠনে ছাত্রলীগ কর্মী ও সমর্থকদের দাপুটে অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সক্রিয় সংগঠন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব-এর বর্তমান কমিটিতে তিনজন জয়েন্ট সেক্রেটারির মধ্যে দুইজনেরই রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এর মধ্যে একজন, ওমর ফারুক সরকার (বাংলা বিভাগ), যিনি সরাসরি ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। অপরজন, লিমন মিয়া ওরফে রবিউল হাসান লিমন (ম্যানেজমেন্ট বিভাগ), যিনি ছাত্রলীগের একজন সমর্থক এবং বিভিন্ন সময় তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রচার করতে দেখা গেছে।
ক্যারিয়ার ক্লাব-এর আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত, হেড অব ব্রান্ডিং হিসেবে রয়েছেন সুমাইয়া আফসিন (বাংলা বিভাগ), যিনি নিজেও একজন ছাত্রলীগ কর্মী।
শুধু ক্যারিয়ার ক্লাব নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগভিত্তিক শিক্ষার্থী কল্যাণ সমিতিগুলোর মধ্যেও ছাত্রলীগের প্রভাব সুস্পষ্ট:
দিনাজপুর জেলা শিক্ষার্থী কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা হিমেল রায় (বাংলা বিভাগ) ছাত্রলীগের সমর্থক।
ঢাকা বিভাগীয় শিক্ষার্থী কল্যাণ সমিতির প্রেসিডেন্ট লিমন মিয়াও (ম্যানেজমেন্ট বিভাগ) ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
ময়মনসিংহ বিভাগের তথ্য সম্পাদক সোহাগ আকন্দ (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) ছাত্রলীগের একজন দৃশ্যমান কর্মী।
যশোর জেলার প্রচার সম্পাদক সুমাইয়া আফসিন (বাংলা বিভাগ) ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে একাধিকবার সরব ছিলেন।
ঝিনাইদহ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক লাবিব হাসান (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠে এসেছে — যখন গোটা দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের সহিংসতার বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ, তখন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কেন বারবার সেই ফ্যাসিস্ট রাজনীতির ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে?
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে এখনো ছাত্রলীগের কর্মী ও সমর্থকদের আধিপত্য প্রমাণ করে যে, প্রশাসনিক কিংবা সাংগঠনিক কোনো স্তরেই ফ্যাসিস্ট রাজনীতির প্রভাব এখনো শেষ হয়নি। ছাত্রসমাজের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে অবজ্ঞা করে এই প্রবণতা নতুন প্রজন্মের চিন্তাশীল শিক্ষার্থীদের হতাশ করছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন