বাবা দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত বাবা,সংসারের হাল ধরে চিকিৎসা করাতে পড়ুয়া ক্ষুঁদেই ভরসা
কুতুব উদ্দিন মোল্লা, ক্যানিং
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থানার অন্তর্গত ধোষা-চন্দনেশ্বর পঞ্চায়েতের কলোনি পাড়া।পাড়ারই বাসিন্দা দম্পতি বিজয় শিকারী ও সুচিত্রা শিকারী।
জীবন এক জংশন,যে কোন মুহূর্তে থেমে যেতে পারে!তবে হাল ছাড়তে নারাজ। অদম্য জেদ আর লড়াইয়ে সামিল হয়ে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে ক্ষুঁদে পড়ুয়া। দম্পতির একমাত্র মেয়ে সুমিত্রা।সুমিত্রা স্থানীয় নবীনচাঁদ উচ্চমাধ্যমিক হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।পড়াশোনায় মেধাবীও বটে। নুন আনতে পান্তা ফুরানো পরিবারের বিজয় কোন রকমে মশলা মুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতেন।একমাত্র মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে চিকিসক করার স্বপ্ন দেখতেন একসময়। আচমকা সব স্বপ্ন ছারখার হয়ে যায়। স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে দরিদ্র এই মশলামুড়ি বিক্রেতার!গত প্রায় দুবছর আগে হার্টের রোগ ধরা পড়ে বিজয়ের।বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়ে সবশেষ। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের কাছে চিকিৎসা করানোও দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়ে। বর্তমানে ব্যবসা বন্ধ। ওষুধের জন্য প্রতিমাসে প্রয়োজন প্রায় দুহাজার টাকা!এমনকি দৈহিক গঠনও হ্রাস হতে থাকে বিজয়ের। এমনত অবস্থায় দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত বাবাকে সুস্থ করতে মরিয়া একমাত্র মেয়ে।বাবা কে শুধু সুস্থ করে তোলা নয়!পড়াশোনার করে চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংসারের হাল ধরেছে ছোট্ট ক্ষুঁদে সুমিত্রা। বর্তমানে বাবার পেশাকেই হাতিয়ার করে এগিয়ে চলেছে সে। স্কুলে পড়াশোনার ফাঁকে পাড়ায় পাড়ায় কিংবা বাজারে বেরিয়ে পড়ে মশলা মুড়ি আর ঘটি গরম বিক্রি করার জন্য। এক জায়গা থেকে অপর জায়গা,হাড় কাঁপানো খাটুনি করতে হয় সপ্তম শ্রেণীর এই ছাত্রীর।মাঝে মধ্যে মা সুচিত্রাও সহযোগিতা করেন মেয়েকে। তার আশা বাবাকে একদিন সুস্থ করে তুলতে পারবে সে।
সুমিত্রা জানিয়েছে, ‘মশলা মুড়ি বিক্রি করে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। সংসার খরচ,পড়াশোনা খরচ চালিয়ে বাবার ওষুধ কিনতে হয়। কোন কোন মাসে ওষুধ কেনা সম্ভব হয় না।যদি কোন সহৃদয় ব্যক্তি বা সংস্থা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন তাহলে হয়তো বাবাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা সম্ভব হতো।সুমিত্রা আর জানিয়েছে, মশলা মুড়ি বিক্রির পাশাপাশি পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায়। শুধু চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নয়,গ্রামের অসহায় দরিদ্র মানুষরা যাতে চিকিৎসা পরিষেবা পায় সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে চলেছে সে।’
সুমিত্রার মা সুচিত্রা শিকারী জানিয়েছেন, স্বামী দুবছরেরও অধিক সময় অসুস্থ।কিছুই করতে পারে না। মেয়ের কাঁধে সংসারের জোয়াল।নুন আনতে পান্তা ফুরায়,আগামী দিনে পড়াশোনা করে মেয়ে একজন সফল চিকিৎসক হতে চায়!দরিদ্র মানুষ কে সেবা করতে চায়। কিন্তু কি ভাবে সম্ভব?
অন্যদিকে অসুস্থ বিজয় অপলক দৃষ্টিতে চাতকের মতো মেয়ের উপার্জনের দিকে তাকিয়ে। সুস্থ হয়ে বাঁচার আশায় অধীর আগ্রহে প্রহর গুণছেন।
এলাকার মানুষের দাবী, ‘সমস্ত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সুমিত্রা একদিন সফল হবেই। প্রতিভাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। এটা তাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
إرسال تعليق