সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ

 



পূর্ব বিরোধের জেরে উলিপুরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ: গুরুতর আহত ৪ 


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি 


কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের সরদারপাড়া গ্রামে, পূর্ব শত্রুতার জেরে দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে এক অটোচালক, তার ভাই, বৃদ্ধা মা ও এক ভাতিজা গুরুতর আহত হয়েছেন। 

ঘটনাটি ঘটেছে গত ১১ জুন (বুধবার) দুপুর আনুমানিক ৩টায়। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


ভুক্তভোগী মোঃ মজিদ মিয়া (৪২) উলিপুর থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন ১নং আসামি মোঃ এনামুল হক (৪৫) পরিকল্পিতভাবে বাইসাইকেল নিয়ে তার অটোরিকশার পেছনে ধাক্কা দেন। এতে পুরনো বিরোধের জেরে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। মুহূর্তেই এনামুল হকসহ মোট ৫ জন দেশীয় অস্ত্রসহ তার বাড়িতে হামলা চালান।


হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত অভিযোগে বলা হয়, ২নং আসামি মোঃ সিরাজুল ইসলামের নির্দেশে এনামুল হক বলরাম দিয়ে বড় ভাই মোঃ মজনু মিয়াকে পেটের দিকে আঘাত করলে সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার জননেন্দ্রিয়ের গোড়ায় লেগে গুরুতর জখম হয়। এতে আটটি সেলাই লেগেছে।


একই সময় মজিদ মিয়াকেও লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করা হলে আঘাতটি মুখের ডান পাশে লেগে চোয়ালে গভীর জখম সৃষ্টি হয়, যার জন্য দু'টি সেলাই দিতে হয়। এছাড়া হামলাকারীরা তার বৃদ্ধা মা মোছাঃ জামিরন বেগমকে (প্রায় ৭০) লোহার রড দিয়ে নাকে আঘাত করে, ফলে তার নাক ফেটে রক্তপাত হয়। ভাতিজা শাকিল মিয়াও ধারালো অস্ত্রে আহত হন।


আহতদের মধ্যে মজনু মিয়া ও জামিরন বেগমকে গুরুতর অবস্থায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মজিদ মিয়া ও তার ছেলে মিজানুর রহমান প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ভাতিজা শাকিল স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।


ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোছাঃ গোলেনুর বেগম বলেন,

“চোখের সামনে এমন নির্যাতন হবে ভাবিনি। এনামুল ও তার পরিবারের সদস্যরা হঠাৎ এসে লাঠি-রড নিয়ে মজিদের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা বাধা দিতে গেলে তারাও আমাদের হুমকি দেয়।”


স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ তৈয়ব আলী বলেন, “এটা পরিকল্পিত হামলা, আগেও দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ ছিল। এই ঘটনার কঠিন বিচার হওয়া উচিত।”


অস্বীকার ও পাল্টা দাবি করে, অভিযুক্ত ১নং আসামি মোঃ এনামুল হক বলেন, “আমি কোনো হামলায় জড়িত না, কিভাবে কি হলো আমি কিছুই জানি না।”


২নং আসামি মোঃ সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন,

“আমি ঝগড়ার কথা শুনে গিয়েছিলাম, মারামারি থামাতে গিয়ে আমি নিজেই আহত হয়েছি। কাউকে মারিনি।”


দলদলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, “এই দুই পক্ষের মধ্যে আগেও বিরোধ ছিল। একটি মামলা এখনো বিচারাধীন। ঘটনার দিন গণ্ডগোল হয়েছে শুনেছি, তবে দুই পক্ষের মধ্যে এখনো আমার কাছে কেউই আসেনি।”


উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন,“আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”


ঘটনার পর পুরো সরদারপাড়া এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, প্রায়শই এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এলাকাবাসীর দাবি, উভয় পক্ষকে আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

Post a Comment

أحدث أقدم