তাহিরপুরের ইউএনও যখন শিক্ষক
আহম্মদ কবির,তাহিরপুর
দাপ্তরিক কাজের ফাঁকে সামান্য সুযোগ পেলেই ছুটে চলেন যে কোন নিকটবর্তী বিদ্যালয়ে।সেখানে গিয়েই বিদ্যালয় প্রধানের অনুমতি নিয়ে ঢুকে পড়েন যে কোন শ্রেণীকক্ষে।তখনই পাল্টে যায় নির্বাহী কর্মকর্তার দৃশ্যপট,হয়ে যান একজন পেশাদার শিক্ষক,শ্রেণীকক্ষের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে মজার মজার গল্পের মাধ্যমে শুরু করেন পাঠদান। শুধু পাঠদানেই করেননি,শিক্ষা ব্যবস্থার কীভাবে উন্নতি করা যায় সে ক্ষেত্রেও সজাগ দৃষ্টি রাখা এই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হচ্ছেন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম।
বুধবার(২৯মে)দুপুরে উপজেলার শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় আধাঘন্টা পাঠদান করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অবাক করে দিলেন তিনি।
জানাযায় বুধবার দুপুরে জরুরি কাজ সেরে শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে উপজেলা সদরে আসছিলেন,এসময় তিনি দেখতে পান
এই বিদ্যালয়ে ক্লাস হচ্ছে।সাথে সাথে উনার গতিপথ রোধ করে বিদ্যালয়ে উঠে,বিদ্যালয় প্রধানের অনুমতি নিয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে পাঠদান শুরু করেন। এইসময় বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করে একজন ইউএনওকে পেশাদার শিক্ষক হিসেবে পেয়ে অবাক হয়ে যায়।এসময় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারাও তাকিয়ে থাকেন অবাক দৃষ্টিতে।
জানাযায় এর আগেও পূর্বের কর্মস্থলে এমন অবধানের জন্য সেখানকার জনগণের প্রশংসা কুড়িয়েছেন বারংবার।একজন সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েও শিক্ষকতা করার এমন বাসনা এখনো হৃদয়ে ধারণ করেন তিনি।এমন বাসনা থেকেই তিনি দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুযোগ পেলেই চলে যান কোন না কোন বিদ্যালয়ে।শুধু তাই নয় এই হাওর কেন্দ্রিক তাহিরপুরের শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে উপজেলা সদরে উনার হাত ধরেই একটি বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ইউএনও'র পাঠদানের বিষয় শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান ইউএনও স্যার আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করেছেন ও বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশ্নও করেছেন তিনি।এছাড়াও কীভাবে পড়াশোনা বিষয়ে বিভিন্ন টেকনিক ও নিয়মকানুন শিখিয়েছেন।শিক্ষার্থীরা জানায় ইউএনও স্যার স্কুলে এসে আমাদের মজার মজার গল্পের মাধ্যমে পাঠদান করিয়েছেন এতে আমরা অনেক খুশি। উনি ক্লাস নিয়ে চলে যাওয়ার সময় আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি তাই পুনরায় আমাদের বিদ্যালয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছি।যাওয়ার পূর্বে ইউএনও আবুল হাসেম বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে বিদ্যালয়ের কোন সমস্যা আছে কি-না এ বিষয়ে খোঁজখবর নেন।সেই সাথে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য অনুরোধ করেন।
পাঠদানের বিষয়ে ইউএনও আবুল হাসেম জানান কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াতে খুব আনন্দ পাই।উনি বলেন শিক্ষ ও জ্ঞান কে ছড়িয়ে দেওয়ার আনন্দ আর কিছুতেই নেই।এতে শুধু আনন্দেই নয় আমার দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনেও হয়,যেমন বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান যাচাই ও বিদ্যালয়ের কোন সমস্যা আছে কি-না স্বচক্ষে দেখা।উনি বলে বলেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসাবে গঠন করতে প্রথমেই দরকার শিক্ষা।আমি একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসাবে একজন নির্বাহী কর্মকর্তা হয়েও দাপ্তরিক কাজের ফাঁকে বিদ্যালয়ে পাঠদান করে শিক্ষকদের কাজের গতিবেগ বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়াটাকেও রাষ্ট্রীয় সেবা মনে করি।উনি বলেন এই কাজটি করতে পারা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
আহম্মদ কবির
তাহিরপুর
মোবাইল ০১৭২৫৭২৪৬০০
إرسال تعليق