বাংলার ৬৩ হাজার গ্রাম দেখেছে শহীদুল সাপুড়ের বিস্ময়কর আজব অবাককর সাপ খেলা ।
মহেশপুর উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ অমিদ হাসান
সাপ মানেই গা শিউরে উঠার মতো ঘটনা । এরপর যদি হয় বিষধর সাপ তাহলে তো কথাই নেই । সেই সাপ নিয়ে কত-রকমের খেলা । আর এই সাপকে বসে আনা সাপুড়ের কাছে।চিরকালই আকর্ষণীয়। এমনই এক গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও ব্যতিক্রমি ঝাপান খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভগবাননগর গ্রামে । দিনব্যাপি এ খেলার আয়োজন করে স্থানীয় ভগবাননগর পূজা উদযাপন কমিটি। সকাল থেকেই দুর-দুরান্ত থেকে খেলা দেখতে আসতে শুরু করে হাজার হাজার মানুষ। খেলাকে ঘিরে ওই এলাকা পরিণত হয়েছিল উৎসবের নগরী।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাদ্যের তালে তালে আর বাশির সুরে একে একে ঝুড়ি ও হাড়ি থেকে বের হয়ে আসে গোখরাসহ বিভিন্ন বিষধর সাপ। মনসা মঙ্গলের পালা গানসহ বিভিন্ন গানের সাথে বাদ্যের তালে সাপুড়েকে নিজে নাচতে হয় আর সাথে ফনা তুলে সাপও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে। সাপুড়ের ইশারায় সাপের এই অঙ্গ ভঙ্গি প্রদর্শন মানুষকে দেয় অনাবিল আনন্দ। ঝিনাইদহের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, শিশুরা উপস্থিত থেকে নিবিড় দৃষ্টিতে উপভোগ করেন এই খেলা। আর খেলাকে ঘিরে এখানে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। আর এই দুর্লভ দৃশ্য দেখতে দূরদূরন্ত থেকে ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা।তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া লাবিবা জানান, আমার জীবণে এমন খেলা প্রথম দেখলাম । মজা লাগলো ।সনেকা রানী জানান, মা-মনসা পূজা উপলক্ষে এ খেলার আয়োজন । সত্যিই ব্যতিক্রমী খেলা । আমি আমার ৪ বছরের বাচ্চাকে সাথে নিয়ে বসে খেলা দেখছি । দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা লিটন সাপুড়ে জানান, মানুষকে আনন্দ দেওয়াই মূল উদ্দেশ্যে। সারা দেশে আমরা এ খেলা করে থাকি । যেখান থেকে ডাক পাই সেখানেই ছুটে যাই ।৫০ বছরের উপর খেলা দেখানো ৬৩ বছরের শহীদুল সাপুড়ে জানান, ভারতে পর্যন্ত এ খেলা প্রদর্শন করেছি । ওরা আমাদের খুব সম্মান করে । ৬৮ হাজার গ্রাম বাঙলার ৬৩হাজার গ্রামে এ খেলা দেকেয়েছি আমি ।প্রতিযোগীতায় প্রখম হওয়া সোহেল সাপুড়ে জানান, মানুষকে আনন্দ দেওয়া আর নিজেদের আনন্দ পাওয়ার জন্যই এ খেলা করি । টাকা পয়সা ব্যাপর না । ইজ্জতের লড়াই চলে । আমাদের আদি পেশা আজ হুমকির মুখে । মানুষ খুব কমই এ ধরনের আয়োজন করে থাকে । বেশী বেশী এমন খেলা হলে মানুষ যেমন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য দেখতে পাবে তেমনি নুতন প্রজন্ম জানবে আমরাও এ সমাজের একটি শ্রেনি ।ঝিনাইদহের শৈলকুপার দুধসর ইউনিয়নের মেম্বার আকরাম হোসেন জানান, চিরায়ত বাংলার ঐহিত্যবাহী এ খেলা ধরে রাখতেই এই আয়োজন বলে জানালেন আয়োজক। খেলার ৩টি রাউন্ড শেষে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দলকে যথাক্রমে ৭হাজার, ৫হাজার ও ১টি মোবাইল উপহার দেওয়া হয়। দিনভর এ খেলায় সকলকে হারিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে ঝিনাইদহের সোহেল সাপুড়ে। ৮ সাপুড়ে দলের অর্ধ শতাধিক সাপের মধ্যে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে প্রতিটি সাপ প্রদর্শন করে নিজেদের আকর্ষণীয় কসরত।
إرسال تعليق