সন্ধানে বাংলাদেশ সংবাদ

 



মো:মেহেদী হাসান খন্দকার 

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি 


কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া বাংলাদেশের এক গৌরবময় অধ্যায়। দীর্ঘ ৬৮ বছরের বৈষম্য ও সুবিধা বঞ্চিত গ্রাম দাসিয়ারছড়ার মানুষের ছিল না কোন স্বাধীন স্বত্বা। ফলে ওই সময় থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবনে। 



পরিশেষে,২০১৫ সালের ৩১ জুলাই বর্তমান সরকারের  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহৎ উদ্যোগে বাংলাদেশ ও ভারত মুজিব-ইন্দিরা সীমানা চুক্তি’র বাস্তবায়ন করেন। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল দুই-দেশর ভু-খন্ডে যুক্ত হয়। এতে স্বাধীন দুই দেশের পতাকার আদলে ঠাঁই হয় অভুক্ত ছিটমহলবাসীর। ক্রমে ক্রমে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় উন্নয়নের ছোঁয়ায় সাত বছর পেরিয়ে আট বছরে দাশিয়ার ছড়ার মানুষের ভাগ্যের আমুল পরিবর্তন হয়। এতে করে এখানকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ,যোগাযোগসহ সবধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়েছে তারা। এমনকি এবছর ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এমপিও ভুক্ত হয়েছে।  



জানা গেছে, শুধু দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে ১৪ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। এর মধ্যে এবছর চারটি প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত হয়। এছাড়াও ২টি ডিজিটাল সেন্টার, পাঁচটি মসজিদ, একটি মন্দির ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ২৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। 



আগামী রোববার (৩১ জুলাই) বৃহত্তম বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়াবাসী এইদিন রাত ১২টা ১ মিনিটে ৬৮টি মােমবাতি প্রজ্জ্বলন করে অষ্টম বর্ষে পর্দাপণ অনুষ্ঠান পালন করবেন বলে জানা গেছে। এ-উপলক্ষ্যে এদিন নানান কর্মসুচী পালিত হবে এখানে।



এবিষয়ে কথা হয় দাসিয়ারছড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাণী সঙ্গে। সে বলে, আগে ভুয়া পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের স্কুলে পড়তাম। এখন নিজের পরিচয় দিয়ে স্কুলে পড়ছি। খুবই ভালো লাগে নিজেকে গর্ভবোধ মনে করি। 



দাসিয়ারছড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মান্নান খাঁন বলেন, স্থানীয়দের উদ্যোগে দাসিয়ারছড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। এবার এই বিদ্যালয়টি এমপি ভুক্ত হয়েছে এজন্য আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে এখানকার নারী শিক্ষার আরও প্রসার ঘটবে। 



দাসিয়ারছড়া ডিজিটাল সেন্টারে শিক্ষার্থী সুলতানা পারভীন বলেন, আগে এখানে লেখাপড়া করারেই কোন সুযোগ ছিল না। এখন এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি ডিজিটাল সেন্টারে প্রশিক্ষন নিচ্ছি আমরা।


এর ফলে আমরা বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছি। 



ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি মোঃ আলতাফ হোসেন বলেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিটমহল বিনিময় করেছেন। শুধু তাই নয় আমাদের নাগরিকত্ব দিয়েছে। পাশাপাশি এখানে অনেক উন্নয়ন পেয়েছি। যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও কৃষিতে। এতো উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।



ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ বলেন, ভারতের যে ১১১টি ছিটমহল ছিল তার মধ্যে সর্ববৃহৎ ছিটমহল ছিল দাসিয়ারছড়া।এই ছিটমহলটি তিনটি ইউনিয়নের সঙ্গে অন্তরভুক্ত আছে। বাংলাদেশে আন্তরভুক্ত হওয়ার পর তাদের যে সুযোগ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছি আমরা। সরকারের যে সামাজিক বেষ্টনী আছে তা দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাভাবিক নাগরিকগনের যে সুযোগ সুবিধা আছে,তার চেয়েও কিছুটা বেশি পাচ্ছে এখানকার নাগরিকরা।



উলেখ্য ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে বাংলাদেশ ও ভারত মুজিব-ইন্দিরা সীমানা চুক্তি’র বাস্তবায়ন করেন বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই দিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল দুই-দেশর ভু-খন্ডে যুক্ত হয়। নাগরিকরা হয়ে যান স্বাধীন। দীর্ঘ ৬৮ বছরের বঞ্চনার পর ১৬২টি ছিটমহল একীভূত হলে  নাগরিকরা পছন্দমত দেশের নাগরিক হতে পেরে খুশি এখানকার মানুষজন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন